Cat Health

বিড়াল কিছু না খেলে করণীয় কি? ডাক্তার না বাসায় আছে সমাধান

বিড়াল কিছু না খেলে করণীয় কি? ডাক্তার না বাসায় আছে সমাধান

আপনার আদরের বিড়ালটা কি হঠাৎ করেই খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দিয়েছে বা একদমই খাচ্ছে না? এমনটা হলে দুশ্চিন্তা হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমরা জানি, থাকতে থাকতে বিড়াল একটা সময় পরিবারের সদস্যের মতোই হয়ে যায়। তাই তার কষ্ট হলে আমাদেরও খারাপ লাগে। বিড়ালের খাবার না খাওয়াটা কিন্তু একটা গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হতে পারে, যার পেছনে সাধারণ অরুচি থেকে শুরু করে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যাও। তাই আসুন, এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিই এবং বুঝে নিই বিড়াল কিছু না খেলে করণীয় কী সেই বিষয়ে।  

বিড়াল কিছু না খেলে প্রথমেই যা দেখবেন

বিড়াল হঠাৎ খাওয়া বন্ধ করে দিলে অনেকেই ভয় পেয়ে যান। তবে প্রথমেই আতঙ্কিত না হয়ে কিছু বিষয় ঠাণ্ডা মাথায় পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। প্রথমে দেখুন, আপনার বিড়ালটি কতক্ষণ ধরে কিছু খাচ্ছে না—কয়েক ঘণ্টা, নাকি ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময়? এরপর লক্ষ্য করুন, সে পানি খাচ্ছে কি না। অনেক সময় বিড়াল খেতে না চাইলেও পানি খায়, যা শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

শরীরে অন্য কোনও লক্ষণ আছে কি না, সেটাও খেয়াল রাখুন। যেমন—বমি হচ্ছে কি, পায়খানা পাতলা, শরীর দুর্বল, কাঁপছে, জ্বর আছে, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, বা বিড়ালটা সারাক্ষণ ঝিম মেরে বসে থাকে কি না। আচরণেও পরিবর্তন আসতে পারে—যেমন আগের চেয়ে চুপচাপ হয়ে যাওয়া, অকারণে রাগ দেখানো, বা লুকিয়ে থাকা।

আরেকটা বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ: বিড়ালের চারপাশে বা রুটিনে কোনও পরিবর্তন হয়েছে কি? নতুন কোনো খাবার দেওয়া হয়েছে, বাসার পরিবেশ বদলেছে, নতুন মানুষ বা পোষ্য এসেছে, বা প্রিয় কেউ দূরে চলে গেছে—এসবই বিড়ালের ওপর মানসিক প্রভাব ফেলতে পারে। এই ছোট ছোট অথচ দরকারি বিষয়গুলো যদি খেয়াল করেন, তাহলে পরে পশুচিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলার সময় আপনি খুব সহজেই পরিস্থিতি বুঝিয়ে বলতে পারবেন, আর সঠিক চিকিৎসা পেতে সময়ও কম লাগবে।

কেন আপনার বিড়াল খাচ্ছে না? সম্ভাব্য কারণগুলো

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি তো জানতে এসেছেন “বিড়াল কিছু না খেলে করণীয় কি সেই বিষয়ে, এক্ষেত্রে কেনো খাচ্ছে না তা জানার দরকার কি? দরকার আছে, দরকার হলো আপনি যখন এই কারণ গুলো জানবেন তখন আরো ভালোভাবে সমস্যার গোঁড়ায় যেতে পারবেন এবং গোড়া থেকে সমাধানের পাশাপাশি পরবর্তীতে আর যেনো সেই জাতীয় কোনো সমস্যা না হয় সেই বিষয়েও সচেতন থাকতে পারবেন। 

বিড়াল খাওয়া বন্ধ করে দিলে অনেকেই ভাবেন হয়তো সে খামখেয়ালি করছে। কিন্তু পেছনে থাকতে পারে এক বা একাধিক শারীরিক জটিলতা। অভিজ্ঞ পশুচিকিৎসকদের মতে, বিড়ালের রুচি হঠাৎ কমে যাওয়ার কারণগুলোকে মোটামুটি দুই ভাগে ভাগ করা যায়—শারীরিক সমস্যা ও চিকিৎসাজনিত বিষয়। নিচে সেগুলো এক্সপ্লেইন করা হলো: 

শারীরিক বা চিকিৎসা সংক্রান্ত কারণ

দাঁতের সমস্যা

বিড়ালের খাওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার অন্যতম সাধারণ কারণ দাঁতের ব্যথা। অনেক সময় তাদের মাড়িতে ইনফেকশন (জিনজিভাইটিস), দাঁতে পুঁজ জমা, দাঁত ভেঙে যাওয়া বা মুখের ভিতরে ঘা হয়ে থাকে। এ অবস্থায় প্রতিটি কামড় হয়ে ওঠে যন্ত্রণাদায়ক, আর সে কারণেই খাবার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

হজমে সমস্যা

বমি, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা ডায়রিয়ার মতো হজমের সমস্যা থাকলেও বিড়ালের ক্ষুধা কমে যায়। ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ (IBD), অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ (Pancreatitis) বা পেটের ভিতরে কিছু আটকে যাওয়া—যেমন খেলনা বা সুতো গিলে ফেলা—এসবই তাদের অস্বস্তি বাড়িয়ে তোলে এবং খাবার না খাওয়ার মূল কারণ হতে পারে।

ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ

শ্বাসনালির ইনফেকশন (যেমন: ক্যাট ফ্লু) হলে নাক বন্ধ হয়ে যায়, ফলে তারা খাবারের গন্ধ পায় না। আর গন্ধ না পেলে, রুচিও চলে যায়। সেই সঙ্গে জ্বর বা শরীর ব্যথা থাকলে তারা শুধু খাওয়া নয়, পানি পানও কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়াও, ভাইরাল ফিভার বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদি রোগ

কিডনি, লিভার বা থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে বিড়ালের ক্ষুধা একদম কমে যেতে পারে। বিশেষ করে বয়স্ক বিড়ালদের মধ্যে কিডনি ডিজিজ খুব সাধারণ। থাইরয়েডের গণ্ডগোলে (হাইপারথাইরয়েডিজম) কখনো অতিরিক্ত খিদে, আবার কখনো একেবারে খাওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে—সবই রোগের অবস্থার ওপর নির্ভর করে।

শারীরিক ব্যথা

যেকোনো ধরনের ব্যথা—হোক সেটা বাইরের আঘাত, হাড়ে সমস্যা, বা অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গে জটিলতা—বিড়ালের খাবারে অনীহা তৈরি করতে পারে। অনেক সময় তারা ব্যথা বুঝিয়ে বলতে পারে না, তাই খাওয়ার অভ্যাসে পরিবর্তনই হয়ে ওঠে একমাত্র ইঙ্গিত।

বিষক্রিয়া বা টক্সিন

বাড়িতে থাকা কিছু গাছ, পোকামাকড় মারার ওষুধ, এমনকি মানুষের ওষুধও বিড়ালের জন্য বিষাক্ত হতে পারে। ভুলবশত যদি এমন কিছু খেয়ে ফেলে, তাহলে প্রথম দিকের লক্ষণই হয়—খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া।

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

কোনো দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার অংশ হিসেবে যদি আপনার বিড়াল ওষুধ খায়, তবে সেগুলোর সাইড ইফেক্ট হিসেবেও খাওয়ার ইচ্ছা কমে যেতে পারে। অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিক বা ব্যথানাশক ওষুধ থেকেই এমনটা হয়।

আচরণগত বা পরিবেশগত কারণ 

শুধু শারীরিক অসুস্থতা নয়, বিড়ালের খাওয়ায় অনীহার পেছনে মানসিক চাপ, পছন্দের পরিবর্তন, কিংবা আশপাশের পরিবেশও বড় ভূমিকা রাখে। অনেক সময় বিড়াল একদম সুস্থ থাকলেও হঠাৎ করেই খাওয়া বন্ধ করে দেয়, আর এই আচরণের পেছনে লুকিয়ে থাকে কিছু সরল অথচ গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

খাবারের স্বাদ বা গন্ধ পছন্দ না হওয়া

বিড়ালদের অনেকেই নতুন খাবারে আগ্রহ দেখায় না। হঠাৎ করে পরিচিত ব্র্যান্ড বদলে দিলে, খাবারের স্বাদ বা গন্ধে পরিবর্তন এলে কিংবা বাসি খাবার দিলে তারা তা খেতে চায় না। কারণ তাদের ঘ্রাণশক্তি অত্যন্ত তীক্ষ্ণ—মানুষের চেয়ে প্রায় ১৪ গুণ বেশি। তাই সামান্য গন্ধ বদলালেও তারা সেটা গ্রহণ করতে চায় না।

অপরিষ্কার বা অস্বস্তিকর খাবারের পাত্র

খাবারের পাত্র যদি নিয়মিত পরিষ্কার না করা হয়, তার গায়ে গন্ধ বা খাবারের পুরনো দাগ থেকে গেলে বিড়াল অনেক সময় খাওয়া বন্ধ করে দেয়। কিছু বিড়াল আবার প্লাস্টিকের পাত্র সহ্য করতে পারে না, কারণ এতে খাবারের স্বাভাবিক গন্ধ বদলে যায়। আর অনেকেই হুইস্কার ফ্যাটিগে ভোগে—গভীর বাটির পাত্রে খাওয়ার সময় যখন গোঁফের ডগা পাত্রের গায়ে বারবার লেগে যায়, তখন তারা অস্বস্তি বোধ করে এবং খেতে চায় না। বিড়ালের জনয় কম্ফোর্ট ও পার্ফেক্ট খাবারের পাত্র নিন এখান থেকে। 

খাবার পরিবেশনের জায়গা

খাবার কোথায় দেওয়া হচ্ছে, সেটাও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। বিড়ালের খাবার দেওয়ার স্থান যদি লিটার বক্সের পাশে হয়, খুব ব্যস্ত বা কোলাহলপূর্ণ জায়গায় হয়, কিংবা আশপাশে যদি নিরাপত্তাহীনতা বোধ করে—তাহলে তারা খাওয়া এড়িয়ে চলে। বিশেষ করে যদি আশপাশে বাচ্চা থাকে, কুকুর থাকে, বা হুটহাট অনেক শব্দ হয়, তাহলে তাদের কাছে খাবার সময়টাই অনিরাপদ মনে হয়।

স্ট্রেস বা মানসিক চাপ

বাড়িতে নতুন পোষা প্রাণী বা অপরিচিত কেউ আসা, মালিকের দীর্ঘ অনুপস্থিতি, ঘরের আসবাবপত্রের বড় রদবদল, বা বাইরে আতশবাজির মতো হঠাৎ শব্দ—এসব কারণে বিড়াল স্ট্রেসে চলে যেতে পারে। মন খারাপ থাকলে যেমন আমাদের রুচি থাকে না, তেমনি বিড়ালও খাওয়া বন্ধ করে দিতে পারে। আমেরিকান ভেটেরিনারি বিহেভিয়ারাল অ্যাসোসিয়েশনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবেশগত পরিবর্তন বা মানসিক চাপ বিড়ালের খাদ্যাভ্যাসে সরাসরি প্রভাব ফেলে।

বয়সজনিত পরিবর্তন

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিড়ালের ঘ্রাণশক্তি ও হজমশক্তি দুটোই কিছুটা কমে যায়। এই কারণে তারা নতুন খাবারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে বা আগের মতো আর খেতে চায় না। অনেক সময় দাঁত বা হাড়েও পরিবর্তন আসে, যা খাওয়ার ইচ্ছাকে প্রভাবিত করে।

ভ্যাকসিন নেওয়ার পর

কিছু ভ্যাকসিন নেওয়ার পর ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিড়ালের শরীরে হালকা জ্বর, দুর্বলতা বা অস্বস্তি হতে পারে। এই সময়টুকুতে তারা সাধারণত কম খায় বা একেবারেই খায় না। তবে এটি সাধারণত সাময়িক সমস্যা এবং নিজের মতোই ঠিক হয়ে যায়।

বিড়াল কিছু না খেলে করণীয়

আপনার বিড়াল যদি একটানা ২৪ ঘণ্টার কম সময় ধরে না খায়, এবং তার মধ্যে অন্য কোনও গুরুতর লক্ষণ (যেমন বমি, ডায়রিয়া, হাঁপানি, গায়ে জ্বর বা নিস্তেজ ভাব) না থাকে, তাহলে চিকিৎসকের কাছে ছোটার আগে কিছু সাধারণ ও নিরাপদ চেষ্টা করে দেখতে পারেন। 

অনেক সময় পরিবেশ, খাবারের ধরন বা সামান্য মানসিক অস্থিরতা থেকেই বিড়াল খাওয়া বন্ধ করে দেয়। আর যদি দেখেন অবস্থা গুরুত্বর তখন Online vet কিংবা সরাসরি ভেটকে দেখাবেন। এবার চলুন দেখে নেয়া যাক কোন পরিস্থিতে কি করবেন। 

বাড়িতে যা চেষ্টা করে দেখতে পারেন

১) আগের পছন্দের খাবার ফেরত আনুন: নতুন কোনো খাবারে বদল আনার পরই যদি বিড়াল খাওয়া বন্ধ করে দেয়, তাহলে আগের পরিচিত ও পছন্দের খাবারটা আবার দিন। পরিচিত গন্ধ আর স্বাদ অনেক সময় তাদের রুচি ফিরিয়ে আনে।

২) ওয়েট ফুড ব্যবহার করুন: শুকনো খাবারের চেয়ে ওয়েট ফুড (ভিজা খাবার)—যেমন ক্যানড ফুড বা মাংসজাত খাবার—গন্ধে অনেক বেশি তীব্র। এতে অনেক বিড়াল আকৃষ্ট হয় এবং খেতে শুরু করে। বাজারে এখন অনেক ধরনের ভিজা খাবার পাওয়া যায়, যেগুলো বিশেষভাবে রুচি ফেরাতে সাহায্য করে।

৩) খাবার একটু গরম করে দিন: মাইক্রোওয়েভে মাত্র ১০-১৫ সেকেন্ড গরম করে নিলেই খাবারের গন্ধ আরও বেশি ছড়ায়। তবে খাবার গরম করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, যেন সেটা অতিরিক্ত গরম না হয়ে যায়। আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে দেখে তাপমাত্রা যাচাই করে নিতে পারেন।

৪) ক্যাট ট্রিট ব্যবহার করুন: টুনা মাছ (জলে ডোবানো, লবণ ছাড়া), সেদ্ধ মুরগির মাংস (কোনও লবণ বা মশলা ছাড়া) বা সামান্য ক্যাটনিপ অনেক সময় বিড়ালের রুচি ফেরাতে সাহায্য করে। এগুলো নিয়মিত না দিলেও রুচি ফেরানোর জন্য অল্প পরিমাণে দেওয়া যেতে পারে।

৫) পাত্র ও পরিবেশ পরিবর্তন করুন: খাবারের পাত্র ঠিকঠাক পরিষ্কার আছে কিনা, সেটা খেয়াল করুন। প্রয়োজনে স্টেইনলেস স্টিল বা সিরামিক পাত্র ব্যবহার করুন—যেখানে গন্ধ জমে না। খাবার দেওয়ার স্থান যেন শান্ত, নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন হয়, সেদিকেও নজর দিন। লিটার বক্সের কাছাকাছি বা মানুষের চলাচলের ব্যস্ত জায়গায় খাবার দেবেন না।

৬) হাতে করে খাওয়ানোর চেষ্টা করুন: অনেক সময় মালিক নিজে হাতে খাবার এগিয়ে দিলে বা সামান্য পরিমাণ মুখে ধরলে বিড়াল খেতে শুরু করে। বিশেষ করে মানসিকভাবে অস্থির বা ভীত বিড়ালের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে।

৭) কিছু সময় পাশে থাকুন: বিড়ালরা অনেকটাই মালিকের আবেগ বুঝতে পারে। ওর পাশে বসে আলতো করে গায়ে হাত বুলিয়ে দিলে, ওর প্রিয় শব্দে ডেকে বললে বা একটু খেলার পরিবেশ তৈরি করলে ও অনেক বেশি স্বস্তি পায়। সেই স্বস্তির মাঝেই খাওয়ার আগ্রহ ফিরে আসতে পারে।

কখন আর দেরি নয়? দ্রুত পশুচিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে 

বিড়ালের খাওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া সব সময়ই জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন তৈরি করে না। তবে কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ বা পরিস্থিতি আছে, যেগুলো দেখা দিলে আর এক মুহূর্ত দেরি করা ঠিক নয়। কারণ, না খাওয়ার পেছনে গুরুতর শারীরিক জটিলতা লুকিয়ে থাকতে পারে। নিচের উপসর্গ বা পরিস্থিতিগুলোর যেকোনো একটি থাকলে, সঙ্গে সঙ্গে একজন অভিজ্ঞ পশুচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান:

  • ২৪-৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কিছুই না খেলে: যদি আপনার বিড়াল একটানা একদিন বা দুইদিন কিছুই না খায়, এবং এর মধ্যে জলও পান না করে—তাহলে এটা স্পষ্ট সতর্ক সংকেত।
  • বাচ্চা বিড়াল (Kitten), বয়স্ক বিড়াল (Senior cat) বা আগে থেকে কোনও রোগে আক্রান্ত বিড়াল যদি কয়েক ঘণ্টার বেশি না খায়। এদের শরীরে শক্তির সঞ্চয় কম থাকে। এমতাবস্থার ক্ষেত্রে ভেট এর কাছে নিতে হবে। 
  • খাবার না খাওয়ার সাথে বমি, ডায়রিয়া, প্রচণ্ড দুর্বলতা, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, জন্ডিসের লক্ষণ (যেমন: চোখ বা মাড়ি হলুদ হয়ে যাওয়া) বা অন্য কোনও গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলেও ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। 

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: বিড়াল যদি টানা ২-৩ দিন কিছুই না খায়, তাহলে তাদের লিভারে ফ্যাট জমতে শুরু করে, যাকে “হেপাটিক লিপিডোসিস” বা “ফ্যাটি লিভার ডিজিজ” বলে। এটি একটি মারাত্মক ও প্রাণঘাতী অবস্থা। তাই, বিড়ালের না খাওয়াকে কখনোই হালকাভাবে নেবেন না।

ক্ষেত্রে PriyoPets এর অনলাইন ভেটেরিয়ান ডাক্তার কী করবেন?

আমাদের Online vet ডাক্তার প্রথমে বিড়ালটিকে ভালোভাবে পরীক্ষা করবেন এবং আপনার কাছ থেকে বিস্তারিত ইতিহাস (কবে থেকে খাচ্ছে না, অন্য লক্ষণ, পরিবেশের পরিবর্তন ইত্যাদি) শুনবেন।

কারণ শনাক্ত করার পর, সেই অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করা হবে। এর মধ্যে থাকতে পারে ওষুধপত্র, স্যালাইন দেওয়া (ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধের জন্য), ক্ষুধাবর্ধক ওষুধ, বা বিশেষ থেরাপিউটিক ডায়েট। কিছু ক্ষেত্রে (যেমন পেটে কিছু আটকে গেলে) সার্জারিরও প্রয়োজন হতে পারে। তবে বেশিরভাগ কেস-এ সেটা হয় না। 

প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম, এক্ষেত্রে যা করবেন 

প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ সবসময়ই ভালো, আর বিড়ালের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। অনেক সময় হঠাৎ করেই দেখা যায়, আপনার আদরের বিড়ালটি খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বা একদম অনাগ্রহী হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় চিকিৎসার বিকল্প নেই ঠিকই, তবে একটু সচেতন থাকলে এসব জটিলতা আগে থেকেই ঠেকানো সম্ভব।

প্রথমেই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা বলতেই হয়। অনেক সময় কিডনির সমস্যা, দাঁতের ইনফেকশন বা হরমোনজনিত রোগগুলো শুরুতেই বোঝা যায় না। আপনি হয়তো ভাবছেন, বিড়ালটা একটু চুপচাপ, খাবার কম খাচ্ছে—কিন্তু ভেতরে ভেতরে সমস্যা জটিল হয়ে উঠছে। তাই বছরে অন্তত একবার, আর বয়স্ক বা অসুস্থ বিড়ালের ক্ষেত্রে ছয় মাসে একবার পশুচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া দরকার। সময় স্বল্পতা? এখন অনলাইনে ভেট এর মাধ্যমে সমাধান করুন আপনার বিড়ালের সমস্যা। 

তাছাড়া খাবারের দিকেও নজর দেওয়া জরুরি। বাজারে নানা ধরনের ফুড থাকলেও সব খাবার মানানসই নয়। বিড়ালের বয়স, শারীরিক অবস্থা এবং তার পছন্দ মাথায় রেখে মানসম্মত, পুষ্টিকর খাবার বেছে নিতে হবে। যারা নতুন কোনো খাবার দিচ্ছেন, তারা অবশ্যই সেটা ধীরে ধীরে আগের খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে দেবেন। হঠাৎ খাবার বদলালে অনেক বিড়াল খাওয়াই বন্ধ করে দেয়। 

এছাড়া বিড়ালের মানসিক অবস্থাও তার খাওয়ার ওপর প্রভাব ফেলে। বাসায় নতুন মানুষ, অতিরিক্ত শব্দ, বা অপরিচিত প্রাণীর উপস্থিতি অনেক সময় বিড়ালের মধ্যে চাপ তৈরি করে। এমনকি পরিবেশ বদলালেও সে মানিয়ে নিতে না পেরে খাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তাই চেষ্টা করুন তার জন্য একটি নিরাপদ ও শান্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে। 

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে দাঁতের যত্ন। অনেক বিড়াল মুখে ব্যথা বা দাঁতের ইনফেকশনের কারণে খেতে চায় না। যদিও অনেক অভিভাবক বিষয়টি বুঝতে পারেন না, কারণ বিড়াল ব্যথা লুকিয়ে রাখে। তাই নিয়মিত দাঁতের যত্ন, যেমন ব্রাশ করা বা ডেন্টাল ট্রিট দেওয়া, এবং বছরে একবার স্কেলিং করানো দরকার।

সব মিলিয়ে বলা যায়, খাওয়ার অভ্যাসটা শুধু খাবার নিয়ে নয়—এর সঙ্গে যুক্ত আছে স্বাস্থ্য, মানসিক চাপ, পরিচ্ছন্নতা, পরিবেশ, এমনকি দাঁতের যত্নও। আপনি যদি একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে এগুলো মাথায় রাখেন, তাহলে আপনার বিড়ালটা সুস্থ থাকবে, আর হঠাৎ খাওয়া বন্ধ করে দেওয়ার মতো সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।

চূড়ান্ত মন্তব্য 

বিড়ালের খাবার না খাওয়াটা অবশ্যই চিন্তার বিষয়, তবে আতঙ্কিত না হয়ে বিড়ালকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বিড়াল কিছু না খেলে করণীয় কি সেই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দ্রুত সঠিক পদক্ষেপ নিলে এবং প্রয়োজনে পশুচিকিৎসকের সাহায্য নিলে আপনার বিড়ালটি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। মনে রাখবেন, আপনার একটুখানি সচেতনতাই কিন্তু আপনার ছোট্ট বন্ধুটিকে অনেকখানি ভালো রাখতে পারে।

author-avatar

About Salim Mahamud

I am the author of PriyoPets. Here I publish very helpful content about cat health, cat food, cat behavior, and other things that a cat owner needs to know. Personally, I am also a cat lover, and I have two cats also, so I have good knowledge about it.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *