বিড়াল সাধারণত শান্ত স্বভাবের প্রাণী হলেও, তাদের আচরণ বা স্বাস্থ্যের সামান্য পরিবর্তনও অনেক সময় বড় কোনো সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। এমনই একটি উপসর্গ হচ্ছে কাশি। মাঝে মাঝে বিড়ালের কাশি দেখা দিলেও অনেকেই সেটাকে গুরুত্ব দেন না। কিন্তু নিয়মিত বা দীর্ঘস্থায়ী কাশি অনেক সময় ফুসফুসের জটিলতা, অ্যালার্জি, সংক্রমণ বা শ্বাসযন্ত্রের সমস্যার কারণে হতে পারে।
কাশির ধরন, সময়কাল এবং অন্যান্য লক্ষণের উপর ভিত্তি করে বোঝা যায়, এটি কতটা গুরুতর। কখনও কাশি একেবারে সামান্য অস্বস্তি—আবার কখনও তা হতে পারে প্রাণঘাতী রোগের প্রাথমিক সংকেত। বিড়ালের কাশির পুরো বিষয়টি বুজতে এই আর্টিকেলে তুলে ধরা হবে:
- বিড়ালের কাশির সাধারণ ও জটিল কারণগুলো,
- কী লক্ষণে কাশি চিন্তার কারণ হতে পারে,
- এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—বিড়ালের কাশি হলে করণীয়।
প্রতিটি বিড়াল প্রেমীর উচিত এই বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা রাখা, যাতে বিড়ালের সুস্থতা বজায় থাকে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
বিড়ালের কাশির সম্ভাব্য কারণ
- ১. ভাইরাস সংক্রমণ
বিড়ালে ফেলের হেপেসভায়রাস (Feline Herpesvirus) বা ক্যালিসিভাইরাস (Calicivirus) দ্বারা সংক্রমণ হলে সাধারণ ঠাণ্ডার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এই ভাইরাসগুলো শ্বাসনালীর লাইনিং ঝিল্লি জ্বালাপোড়া করে, ফলে বিড়ালকে বারবার কাশি আসতে থাকে। সংক্রমিত বিড়াল সাধারণত নাক ও চোখ দিয়োক্তনীয় পানিস্রাব ও হাঁচিও করে থাকে। ভাইরাসজনিত কাশি প্রায়শই ৭–১০ দিনের মধ্যে নিজে কমতে পারে, তবে যদি সংক্রমণ ভারি হয় বা দ্বিতীয় কোনো ব্যাকটেরিয়া সংযুক্ত হয়, তখন অবশ্যই ভেটেরিনারিয়ান দেখানো উচিত।
- ২. অ্যালার্জি বা ধুলাবালি
বাড়ির ভেতরে জমে থাকা ধুলো, ফুলের পোলেন, গন্ধযুক্ত স্প্রে, বা এমন কোনো কেমিক্যাল কণিকা বিড়ালের শ্বাসনালী উত্তেজিত করে ফেলতে পারে। এ ক্ষেত্রে কাশি সাধারণত শুকনো ও হালকা, তবে ঘন ঘন হয়। আপনি লক্ষ্য করবেন বিড়াল ঘুরে ফুটা দুলছে, নাক বা চোখ ঘষছে এবং মাঝে মাঝে ঠাণ্ডা হয়ে ওঠার মতো হাঁচি দিচ্ছে। অ্যালার্জি দূর করতে পরিবেশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, হিউমিডিটি নিয়ন্ত্রণ করা এবং নিজে অ্যালার্জেন ছাড়ালে কাজের উন্নতি আসবে।
- ৩. অ্যাজমা বা ব্রঙ্কাইটিস
যদি শ্বাসনালীতে দীর্ঘমেয়াদী জ্বালা-ফলাই বা প্রদাহ থাকে, তাতে অ্যাজমা বা ব্রঙ্কাইটিস হতে পারে। এই অবস্থায় শ্বাস নিতে কষ্ট, শ্বাস ফোঁকার আওয়াজ (wheezing) ও বারবার কাশি দেখা যায়। অ্যাজমা বিশেষত ইন্ডোর বিড়ালে বেশি উপসর্গ তৈরি করে, কারণ তাদের পরিবেশে ধুলো ও এলার্জেন জমতে বেশি সময় পায়। ভেটেরিনারিয়ান ইনহেলার বা নেবুলাইজার থেরাপি দিয়ে কন্ট্রোল করা যায়।
- ৪. পরজীবী (প্যারাসাইট)
হার্টওয়ার্ম বা লাংওয়ার্মের মতো পরজীবী ফুসফুস বা হৃদযন্ত্রের কাছাকাছি অবস্থান করলে শ্বাসনালীর ফাঁকা জায়গা পড়ে, ফলে কাশি, দুর্বলতা ও ওজন কমার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। পরজীবী সংক্রমণ ধরা পড়লে রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে ও মল পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়। প্রিস্ক্রিপশন ওয়ার্মিং ড্রাগ প্রয়োগের পর পরজীবীগুলো ধ্বংস করে দ্রুত আরাম পাওয়া যায়।
- ৫. ফুসফুসে টিউমার বা প্রদাহ
কাছে থেকে বড় কোনো স্তন বা ফুসফুসে টিউমার থাকলেও শ্বাসনালীর ভেতর চাপ পড়ে, ফলে অবিরাম কাশি দেখা যায়। কখনো কখনো রক্তমিশ্রিত কাশিও হতে পারে। এছাড়াও ফুসফুস প্রদাহ (পনিউমোনিয়া) হলে ফারআউট কাশি, জ্বর ও খাদ্য কমে যাওয়ার লক্ষণ মিলবে। এই ধরনের জটিল সমস্যায় সঠিক রোগনিদান ও মার্কিনিতে ছবি (X-ray) প্রয়োজন হয়, যা ভেটেরিনারিয়ান করে থাকেন।
- ৬. খাদ্যজনিত সমস্যা বা বিদেশী বস্তুর আটকে যাওয়া
খাবার খাওয়ার সময় যদি ছোট খেলনা, বাচ্চাদের কোনো অংশ বা কঠিন কণিকা গলায় আটকে থাকে, তাহলে শ্বাসনালীতে বাধা সৃষ্টি হয় এবং বিড়াল বারবার হাঁচি-কাশি করে চেষ্টা করে সেই অজানা বস্তুকে বের করতে। এতে গলা লাল বা সোচ্চার হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে প্রাথমিক পর্যায়ে সামান্য কাশি হালকা হলেও, দেরি হলে ভেটেরিনারিয়ানের কাছে নিয়ে গিয়ে এন্ডোস্কোপিক পদ্ধতিতে উদ্ধার করাতে হয়।
বিড়ালের কাশি লক্ষণ গুলো কি কি?
বিড়ালের কাশি শুনে অনেকেই ভাবেন হয়তো এটা সাধারণ ঠান্ডা বা গলায় কিছু আটকে যাওয়ার ফল। কিন্তু আসল সত্যি হলো—কাশি নিজেই একটা লক্ষণ, এবং এর সঙ্গে আরও কিছু আচরণ বা উপসর্গ একসাথে দেখা দিলে বোঝা যায় সমস্যাটা কতটা গুরুতর। নিচে এমন কিছু লক্ষণ তুলে ধরা হলো, যেগুলো দেখা দিলে বিড়ালের কাশি বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে দেখা উচিত:
১. ঘন ঘন কাশি দেওয়া: বিড়াল যদি বারবার কাশে, বিশেষ করে একটানা কয়েকদিন ধরে, তবে সেটা হালকা বিষয় নয়। কাশি শুকনো (dry) হতে পারে বা শ্বাসের সঙ্গে ভিজে আওয়াজও (wet cough) হতে পারে।
২. কাশির সময় ঘাড় নিচু করে “গ্যাগিং” ধরণের আওয়াজ: এটা অনেক সময় দেখে মনে হয় বিড়াল বমি করতে যাচ্ছে, কিন্তু আসলে সে কাশছে। এটা ফুসফুস বা গলার সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
৩. শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া: বিড়াল যদি মুখ খুলে নিঃশ্বাস নেয়, গলায় আওয়াজ করে শ্বাস ফেলে বা পেটের ভর দিয়ে শ্বাস নিচ্ছে মনে হয়, তবে এটা শ্বাসনালীর জটিল সমস্যার ইঙ্গিত।
৪. চোখ ও নাক দিয়ে পানি পড়া: কাশির সঙ্গে সঙ্গে চোখ বা নাক দিয়ে যদি স্বচ্ছ বা ঘোলাটে তরল বের হয়, তাহলে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।
৫. খাওয়া-দাওয়ায় অনীহা: বিড়াল যদি কাশির সময় খাবার না খায় বা আগের মতো অ্যাকটিভ না থাকে, তাহলে সেটাকে অবহেলা না করে পর্যবেক্ষণে রাখা দরকার।
৬. শরীরের দুর্বলতা ও ঘুম বেশি হওয়া: কাশির সঙ্গে বিড়াল যদি বেশিক্ষণ ঘুমিয়ে থাকে, খেলাধুলা না করে অলস হয়ে পড়ে, তবে সেটা শরীরের ভিতরকার কোনো প্রদাহের লক্ষণ হতে পারে।
৭. হালকা জ্বর বা শরীর গরম হয়ে যাওয়া: স্পর্শ করলে যদি গায়ে গরম ভাব লাগে বা নাক শুকনো থাকে, তবে কাশি ভাইরাল সংক্রমণের অংশ হতে পারে।
৮. রক্তমিশ্রিত কাশি: এই লক্ষণটি সবচেয়ে উদ্বেগজনক। কাশির সময় যদি রক্ত আসে, তাহলে সেটা ফুসফুসের গভীর কোনো রোগ বা টিউমারের লক্ষণ হতে পারে।
বিড়ালের কাশি হলে করণীয়
প্রাথমিক চিকিৎসা
বিড়াল বার বার কাশতে শুরু করলে প্রথম কাজ হলো তাকে দ্রুত শান্ত ও স্বচ্ছ ও ধুলোবালিমুক্ত জায়গায় রাখা। ধূমপান, সুগন্ধি স্প্রে বা অ্যারোসল ব্যবহার এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো শ্বাসনালীর জ্বালা বাড়াতে পারে।
ঘরে এয়ার-ফিল্টার বা কমপক্ষে পাখা চালিয়ে হাওয়া চলাচল রাখুন, কিন্তু সরাসরি ঠান্ডা বাতাস দেবেন না। যদি নাক বা চোখ দিয়ে পানি পড়ে, নরম-ভেজা কাপড়ে আলতো করে মুছে দিন। এছাড়া, বিড়ালকে নিয়ে বাথরুমে গরম পানির শাওয়ার চালিয়ে বাষ্প তৈরি করে ১০–১৫ মিনিট রাখলে শ্বাসনালীর মিউকাস নরম হয় ।
এ সময় বিড়াল পর্যাপ্ত পানি খাচ্ছে কিনা দেখবেন; কাশি ও নিঃশ্বাসকষ্টে দ্রুত পানিশূন্যতা হতে পারে। বিড়ালকে পর্যাপ্ত পানি পান করান এবং সহজপাচ্য, সুগন্ধযুক্ত খাবার দিন, যেমন: ক্যানড টুনা বা মুরগির স্টক। এতে বিড়ালের ক্ষুধা বাড়ে এবং শক্তি ফিরে পেতে সাহায্য করে।
সবশেষে, কাশি দু–তিন দিনের বেশি স্থায়ী হলে, অথবা শ্বাস নিতে মুখ হাঁ করতে হলে, সঙ্গে সঙ্গে ভেটেরিনারিয়ানের কাছে নিয়ে যাওয়াই নিরাপদ।
ঘরোয়া চিকিৎসা
বাড়ির শুষ্ক বাতাস কাশিকে তীব্র করে তোলে, তাই আর্দ্রতা বাড়ানো সবচেয়ে সহজ ঘরোয়া উপায়। হিউমিডিফায়ার চালিয়ে রাখতে পারেন, অথবা বিড়ালকে নিয়ে বাথরুমে গরম শাওয়ার ছেড়ে ১০–১৫ মিনিট বসে থাকুন; বাষ্প শ্বাসনালীর মিউকাস নরম করে কাশি উপশমে সাহায্য করে।
এ সময় ঠান্ডা ড্রাফট বন্ধ রাখতে হবে। বিড়াল স্বেচ্ছায় খাবার না চাইলে সামান্য উষ্ণ “বোন ব্রথ” (লবণ-মশলা ছাড়া মুরগির স্টক) দিতে পারেন—এতে হাইড্রেশন ও পুষ্টি দুইই মেলে। তবে মধু, আদা-জল, বা মানব-কফ সিরাপ কখনোই দেবেন না; বিড়ালের জন্য সেগুলো নিরাপদ নয়। যদি বাড়িতে ধূমপান বা অ্যারোসল-সুগন্ধি ব্যবহার হয়, রোগমুক্তি পর্যন্ত বন্ধ রাখুন, কারণ ভাসমান কেমিক্যাল কাশিকে জটিল করতে পারে।
বিড়ালের কাশির ওষুধ
কাশির প্রকৃত কারণ নিশ্চিত না হয়ে ওষুধ শুরু করা ঝুঁকিপূর্ণ, তাই ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শ অপরিহার্য। সংক্রমণ ধরা পড়লে ডক্সিসাইক্লিন, অ্যামক্সিসিলিন ক্ল্যাভুলাইনিক (ক্ল্যাভামক্স) বা অ্যাজিথ্রোমাইসিন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক ৭–১৪ দিন চালানো হয়।
অ্যাজমা বা ব্রঙ্কাইটিসের ক্ষেত্রে ইনহেলড কর্টিকোস্টেরয়েড ফ্লুটিকাসোন (ফ্লোভেন্ট) ও তীব্র শ্বাসকষ্টে ব্রঙ্কোডাইলেটর অ্যালবুটেরল (ভেন্টোলিন) স্পেসার-মাস্ক দিয়ে প্রয়োগ করা হয়; অনেক ক্ষেত্রে ফ্লুটিকাসোন-সালমেটেরল কম্বো (অ্যাডভেয়ার)ও ব্যবহৃত হয়।
হার্টওয়ার্ম বা লাংওয়ার্ম ধরা পড়লে মিলবেমাইসিন বা সেলামেক্টিন-ভিত্তিক ডিওয়ার্মার প্রস্তাব করা হয়। মানুষের প্যারাসিটামল, আইবুপ্রোফেন, ডেক্সট্রোমেথরফ্যান কিংবা যেকোনো কফ সিরাপ বিড়ালের জন্য বিষাক্ত, তাই কখনও নিজ উদ্যোগে দেবেন না।
বিড়ালের কাশি প্রতিরোধে করণীয়
1) নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ভ্যাকসিন
আপনার বিড়ালের বার্ষিক ফিজিক্যাল-চেক-আপে স্টেথো দিয়ে ফুসফুস শুনে ছোটখাটো শব্দও ধরা পড়ে, যা অনেকের কানে ধরা যায় না। সেই সঙ্গে মূল (core) ভ্যাকসিন—ফেলাইন প্যানলিউকোপেনিয়া, হেপেসভাইরাস-১, ক্যালিসিভাইরাস ও র্যাবিস—শ্বাসনালীর ভাইরাসজনিত সংক্রমণ রোধে অব্যর্থ ঢাল হিসেবে কাজ করে। ইনডোর হোক বা আউটডোর, সব বিড়ালেরই এই টিকার প্রয়োজন আছে; নিয়মিত বুস্টার মিস করলে কাশি-জ্বর এক সঙ্গে ফিরে আসতে পারে
2) ইনডোর ক্যাট রাখলে সুবিধা
বাইরে ঘোরাফেরা করা বিড়াল ধুলাবালি, পরজীবী ও সংক্রমণজ-সর্শনার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ায়। ইনডোর বিড়াল এইসব অ্যালার্জেন ও ফাঙ্গাল স্পোর (যেমন Cryptococcus) থেকে তুলনামূলক নিরাপদ থাকে, ফলে upper-respiratory সংক্রমণের আশঙ্কা কমে গিয়ে কাশি এড়ানো যায়।
3) ধুলোবালি কমানো, হিউমিডিটি ঠিক রাখা
শুষ্ক বাতাসে শ্বাসনালীর মিউকাস শুকিয়ে যায়—কাশি বাড়ে। ঘরে নিয়মিত ভ্যাকুয়াম করুন, বিড়ালের লিটার-বক্সের চারপাশ ধুলোমুক্ত রাখুন এবং ৪০–৫০ শতাংশ আর্দ্রতা অবস্থানে রাখুন। কুল-মিস্ট হিউমিডিফায়ার সবচেয়ে নিরাপদ; কিংবা দিনে এক-দু’বার গরম শাওয়ার চালানো বাথরুমের ভাপেও সাময়িক আরাম মেলে।
4) স্মোকিং বা কেমিক্যাল স্প্রের আশেপাশে না রাখা
সিগারেটের ধোঁয়ার কণা বিড়ালের ফুসফুসে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়িয়ে কাশি, অ্যাজমা-ফ্লেয়ার-আপ এমনকি ফুসফুসের টিউমার পর্যন্ত ঝুঁকি তৈরি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ধোঁয়া-সংস্পর্শে থাকা বিড়ালের দেহে প্রো-ইনফ্ল্যামেটরি সাইটোকাইন বেড়ে যায়। পারফিউম, এয়ার-ফ্রেশনার বা ক্লিনিং স্প্রের কেমিক্যালও একইভাবে শ্বাসনালী উত্তেজিত করে। বিড়ালের ঘরে ধূমপান একদম নিষিদ্ধ রাখুন, আর পরিষ্কারক-স্প্রে করতে হলে জানালা খুলে দ্রুত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করুন।
বিড়ালের সর্দি কাশি হলে করণীয়
বিড়ালের সর্দি-কাশি সাধারণত ভাইরাস সংক্রমণের কারণে হয়, বিশেষ করে Feline Herpesvirus (FHV-1) ও Feline Calicivirus। একে Upper Respiratory Infection (URI) বলা হয়, যা মানুষের সাধারণ সর্দি-কাশির মতোই মনে হতে পারে, কিন্তু বিড়ালের জন্য এটা অনেক বেশি সংবেদনশীল ও ঝুঁকিপূর্ণ।
সঠিক যত্ন না নিলে সংক্রমণ গুরুতর রূপ নিতে পারে এবং খাবার খাওয়া বন্ধ, নিঃশ্বাসে কষ্ট, এমনকি সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। নিচে বিড়ালের সর্দি-কাশি হলে করণীয় কিছু কার্যকর পদক্ষেপ দেওয়া হলো:
১. বিড়ালকে আলাদা রাখুন: যেহেতু সর্দি-কাশি সংক্রমণ ছড়ায়, তাই আক্রান্ত বিড়ালকে অন্য বিড়ালদের থেকে আলাদা ঘরে রাখুন।
২. বিশ্রাম ও আরামদায়ক পরিবেশ: বিড়াল যেন শান্তিতে বিশ্রাম নিতে পারে এমন পরিবেশ তৈরি করুন—নরম বিছানা, নিরিবিলি জায়গা ও গরম রাখার ব্যবস্থা।
৩. বাষ্প (steam) থেরাপি: দিনে ১–২ বার বিড়ালকে গরম পানির শাওয়ার চলানো বাথরুমে ১০–১৫ মিনিট রেখে দিন। বাষ্পে নাক ও গলার শ্লেষ্মা নরম হয়ে সহজে বের হতে সাহায্য করে।
৪. নাক-চোখ পরিষ্কার রাখা: নাক বা চোখে যদি সাদা, হলুদ বা ঘন পানি জমে, তাহলে গরম পানিতে ভেজানো তুলা বা কাপড় দিয়ে আলতো করে পরিষ্কার করুন।
৫. কুসুম গরম খাবার দিন: সর্দি হলে বিড়ালের ঘ্রাণ ক্ষমতা কমে যায়, ফলে তারা খাবার খেতে চায় না। টুনা, ক্যানড খাবার বা মুরগির স্টক হালকা গরম করে দিন, যাতে গন্ধে আকৃষ্ট হয়।
মানুষের কোনো কফ সিরাপ বা ওষুধ বিড়ালকে দিবেন না। যেমন প্যারাসিটামল, আইবুপ্রোফেন বা ডেক্সট্রোমেথরফ্যান—এইগুলো বিড়ালের জন্য বিষাক্ত।
কখন ভেটেরিনারিয়ানের কাছে নিয়ে যাবেন?
বিড়ালের কাশি বা সর্দি-কাশিকে অনেকেই হালকা অসুস্থতা ভেবে অবহেলা করেন, অথচ নির্দিষ্ট কিছু লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে অবশ্যই ভেটেরিনারিয়ানের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। সাধারণত, কাশি যদি ২–৩ দিনের বেশি স্থায়ী হয় বা দিনে দিনে বাড়তে থাকে, তাহলে সেটি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়ে থাকতে পারে এবং চিকিৎসা ছাড়া সেরে ওঠার সম্ভাবনা কমে যায়।
তবে যদি আপনার এরিয়াতে ভেটেরিয়ান ডাক্তার না থাকে, কিংবা যাওয়ার মত সময় সুযোগ না হয় তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। কেননা, এখন অনলাইনে ভেট দেখানোর সুযোগ করে দিচ্ছে PriyoPets Online Vet; এখান থেকে আপনি কাশির সমস্যার জন্য সমাধান নিতে পারেন। শুধু তাই নয় এখান থেকে আপনি ব্যাসিক (ফ্রিতেই) থেকে শুরু করে যেকোনো সমস্যার জন্য ডাক্তার দেখাতে পারবেন।
কেননা, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, বিশেষ করে যদি বিড়াল মুখ হাঁ করে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করে বা বুক-পেট অস্বাভাবিকভাবে উঠানামা করে, তাহলে তা জরুরি অবস্থা—কারণ এটি ফুসফুস, হৃদযন্ত্র বা শ্বাসনালীর জটিলতার ইঙ্গিত হতে পারে।
এছাড়া, বিড়ালের শরীর যদি গরম হয়ে থাকে, কানে বা পেটে অতিরিক্ত উত্তাপ অনুভূত হয়, অথবা যদি সে একেবারেই খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নেওয়া জরুরি।
একইভাবে, নাক দিয়ে ঘন পানি, হলুদ-সবুজ মিউকাস, কিংবা রক্ত বের হলে সেটি সাধারণ কাশি নয় বরং গুরুতর সংক্রমণ বা টিউমার-জাতীয় সমস্যার লক্ষণও হতে পারে। এ ধরনের যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত PriyoPets এর ভেটেরিনারিয়ান থেকে পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
চূড়ান্ত মন্তব্য
আশা করি, উক্ত আর্টিকেলটি দ্বারা বিড়ালের কাশি হলে করণীয় কী হবে সেটি জানতে পেরেছেন। সাধারণভাবে বলতে গেলে, বিড়ালের কাশি কোনো ছোটোখাটো সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে আবার বড় ধরনের শ্বাসনালী ও ফুসফুসের রোগের সূচনাও হতে পারে। তাই কোনো ধরনের কাশি দেখা দিলে তা হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরোয়া যত্ন ও পরিচর্যার মাধ্যমে অনেক সময় সমস্যা নিরসন করা যায়, তবে কাশি দীর্ঘস্থায়ী হলে বা সাথে শ্বাসকষ্ট, রক্তমিশ্রিত কাশি, দুর্বলতা ও খাবার অনীহা দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শ নিতে হবে।
বিড়ালের সুস্থতা বজায় রাখা আপনার দায়িত্ব, এবং সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করাই তাদের জীবনে দীর্ঘায়ু ও আনন্দ নিয়ে আসে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, ভালো পুষ্টি ও সঠিক টিকা প্রয়োগ বিড়ালের শ্বাসনালী সংক্রান্ত অসুবিধা থেকে রক্ষা করবে। মনে রাখবেন, আপনার সচেতনতা ও যত্নই আপনার প্রিয় পোষ্যকে ভালো রাখবে। আর যেকোনো সমস্যার সমাধানের জন্য সঙ্গে আছি আমরা PriyoPets টিম।